মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব জেলেখালি গ্রামের এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা কয়েক যুগ ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত।
প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুৎ থাকলেও এখানে যাতায়াত ব্যবস্থার বেহাল দশা। গ্রামে ১১০টি পরিবার বসবাস করে, লোক সংখ্যা প্রায় ১০০০ এর অধিক। জেলেখালীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্রিপানি মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ, ২৫ নম্বর মথরাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এই গ্রাম থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয় ২টিতে পড়াশোনা করে, তাদের যাতায়াতের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় । শিক্ষার্থীরা বর্ষার সময় কম স্কুলে যেতে পারে। ত্রিপানি বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিমা মন্ডল বলেন বৃষ্টির সময় এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে আমাদের খুব সমস্যা হয়।
এছাড়া এ রাস্তার দুই পাশে কাটাযুক্ত বাউলা গাছ কাদায় কাটা পড়ে থাকে, আমাদের পায়ও ফুটে যায় কাঁটা, আমাদের দাবি রাস্তাটি পাকা হোক।
পূর্ব জেলেখালি উন্নয়নমুখী এলাকায় ৬০ টি অধিক সমন্বিত সবজি চাষের প্লোট রয়েছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সত্য এই এলাকার কৃষকরা বর্ষা মৌসুমী সবজিগুলো বাজারে নিয়ে যেতে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হিমসিম খেতে হয়। সরজমিন প্রতিটি সমন্বিত সবজি চাষ প্লোটে বিপুল পরিমাণে সবজী দেখা গিয়েছে।
সাথে ধান সহ পানিতে গলদা চিংড়ি সহ সাদা মাছ চাষ করছে। এখানকার কৃষক মঙ্গল মণ্ডল জানান সপ্তাহে পাঁচটি বাজারে আমাদের পূর্ব জেলেখালি এই কৃষি খামার থেকে সবজি নিয়ে যেতে হয়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মন সবজি ওঠে। কিন্তু যাতায়াত এই রাস্তা কাঁদা থাকার কারণে সবজিগুলো সামনের পিচের রাস্তায় নিয়ে যেতে চরম কষ্ট হয়।
কৃষক কানাই লাল মন্ডল বলে আমাদের এখানে প্রায় প্রতিটি পরিবার সবজী ও ধান চাষ করে স্বচ্ছল আছে, আমরা এখানে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করি, যে মৌসুমে যে ধরনের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব আমরা সেই ফসল উৎপাদন করি, আমাদের এখান থেকে নওয়াবেঁকী, শ্যামনগর বাজারে সবজি নিয়ে যায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া আমরা নিজেরাও বাজারে নিয়ে বিক্রি করি।
মাছের চাহিদা সহ প্রয়োজনী সবজী উৎপাদন করে শ্যামনগরের কৃষি উৎপাদনে সহায়তা করে যাচ্ছি। কৃষানি রুপা রানী মন্ডল বলেন আমরা সারাদিনই কৃষি খামারে ব্যস্ত থাকি আমরা এখান থেকে সে ফসল উৎপাদন করি সেগুলো নিয়ে যাওয়া কাঁচা রাস্তায় চরম দুর্ভোগ। আমাদের দাবি এই রাস্তাটা পাকা করা হোক তাহলে আমরা আরো সবজির দাম বেশি পাব।
কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক গোষ্ঠ মন্ডল বলেন আগে এই এলাকার কৃষকরা এক ফসলে ধান চাষ করত, পরে সেই জমিতে কৃষি খামার করেএকাধিক ফসল উৎপাদন সহ মাসের চাষ করে এলাকার কৃষকরা মোটামুটি ভালই আছেন। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয় আমাদের গ্রামে, সেখানেই যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ সে কারণেই আমাদের কৃষকরা ধরা খেয়ে যাচ্ছে, সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।
আমাদের দাবি দীর্ঘদিনের এই কাঁচা রাস্তাটি যাতে পাকা হয় সরকারের কাছে আমরা এই দাবি করি। কৃষক উদয় মন্ডল জানান ২০১৮ সালে এই রাস্তাটি পাকা করার জন্য আমরা গ্রাম থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সহযোগিতা করেছিলাম কিন্তু আজও সেই রাস্তা পাকা হয়নি। সেই রাস্তা দিয়ে বর্ষার সময় সবজি নিয়ে চরম কষ্ট হয়। সমাজসেবক তপন মন্ডল বলেন ২০১৮ সাল মাননীয় এমপি মহোদয়ের কাছ থেকে ডিও নিয়ে এলজিডি কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এবং রাস্তাটির মাপ হয়ে গেছে পিচ করার কথা, কিন্তু এখন দেখছি যেটুকু রাস্তায় ইট ছিল সেখান থেকেই পিচের বাজেট হয়েছে। আমাদের দাবির যে কাঁচা রাস্তাটি সেটি সম্পূর্ণ কাঁচা রয়ে গেছে।
ত্রিপানী বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক চন্দন মিস্ত্রি জানান পূর্ব জেলেখালি ওই কাঁচা রাস্তাটি দুইটি মেম্বারের সীমানায় যে কারণে দীর্ঘদিন থেকে আমরা কথা বলে আসলো কাজ হয়নি, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরাও বর্ষার সময় কম উপস্থিতি হয়, আমরা তেমন কিছু বলতে পারিনি এ বিষয়ে আমরা বর্তমান চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করার দাবীও জানিয়েছে। এক ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগ রাস্তা পূর্ব জেলেখালি রাস্তাটির বিষয়ে এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরিদাস হালদারের নিকট কথা হলে তিনি বলেন আমরা জানি জেলেখালি থেকে পূর্ব জেলেখালি হয়ে সিএমবি রাস্তা পর্যন্ত এ রাস্তাটি পিচের বাজেট হয়েছে, দ্রুত কাজ হতে পারে।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন পূর্ব জেলাখালী এলাকার জনগণের একমাত্র দাবী ওই রাস্তাটি সংস্কার করা, আমি জেনেছি ওই গ্রামের একটি অংশে কার্পেটিং এর বাজেট হয়েছে। বাকি অংশের জন্য ইতিমধ্যেই উপজেলা প্রশাসনসহ আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের প্রস্তাবনার মধ্যে দিয়ে রেখেছি দ্রুত কাজটি করার জন্য আমি উদ্যোগ গ্রহণ করছি ।
Leave a Reply